রংপুর একটি ঐতিহাসিক স্থান । প্রাগজ্যোতিষ, কামরূপ, কামতারাজ্য ও মন্থনাকোট এর ধারাবাহিকতায় রংপুর এসেছে। মধ্যযুগের মানচিত্রে এ তথ্যসমূহ উপস্থিত। রংপু,দিস্তাং, তিস্তা ইত্যাদি নামের একটি ঐতিহাসিক নদী এবং সে নদীর বিস্তীর্ণ তীরভুমি অধ্যুষিত জনপদসমূহই প্রথমত: রংপু ও পরবর্তী পর্যায়ে রংপুরের ভৌগলিক – সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস সূচিত করে। মধ্যযুগের প্রারম্ভে সংঘটিত আলেকজান্ডার-ভারতবর্ষ যুদ্ধের (থৃষ্টপূর্ব ৩২৩) লিখিত ও চলচিত্রায়িত ইতিহাস পাওয়া যায়। সে যুদ্ধে কামরূপ থেকে হস্তিবাহিনী বা গজারোহী বাহিনীর অংশগ্রহণ ছিল।সেকালে কামরূপ নামাবলীর আবরণে রংপুর তথা তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চলের জনপদের সামন্ত শাসকদলেরেও ছিল জাতীয় লোগো বা প্রতীক। সে প্রতীক ছিল হস্তী বা হাতির মূর্তি। কৈবর্তদের ক্ষমতা দখলের ইতিহাস আছে সন্ধাকর নদীর রামচরিতম কাব্যে, যে ইতিহাস বৃহত্তর রংপুর জনপদকেই সম্পৃক্ত করে। ১৯৭১ সালে কৈবর্তরাজ দিব্যক ও তার ভ্রাতুষ্পুত্র ভীম এর বরেন্দ্র অধিকার, রাজধানীশহর গঠন, পৃথক সেনাবাহিনী ও রাজত্ব সংগঠিতকরণ, অত:পর রামপালের মারণাস্ত্রসমৃদ্ধ সংগঠিত বাহিনীর বিপক্ষে উত্তরবঙ্গবাসী আমজনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ উত্তরবঙ্গবাসী বাঙালির বীরত্বের স্বাক্ষর বহন করে। সুলতানী আমলে ঘোড়াঘাট ও পীরগঞ্জ চতরা হয়ে দাড়ায় সাময়িকভাবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান । পীরগঞ্জ-চতরা সীমানাভূক্ত । সুলতানী আমলের ইতিহাস পাঠে জানা যায় , ঘোড়াঘাটকেন্দ্রীক অর্ধ-শতাব্দীকাল ব্যাপী অর্ধ শতাধিক যুদ্ধ সঙঘটিত হোয়ার মধ্য দিয়েই বাঙলা মানচিত্রের আসল গড়াপেটা রুপ লাভ করেছে্ । সামরিক আধিপত্য বিস্তারকে উপলক্ষ করে যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলাফল নির্ণয় করেছে জাতিগত বিষয়াদি। যেমন, ১৪৫৯-৭৪ পর্যায়ে সুলতান রুকনউদ্দীন বরবক শাহের সময়কালে ঘোড়াঘাট ফৌজদারীর সেনাধ্যক্ষ শাহ্ ইসমাইল গাজী (রা:) এবং ১৪৭৪-১৫১৫ সময়কালের সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের সময়কালে তাদের অর্জিত আধিপত্য প্রক্রিয়ায় অত্র অঞ্চল অর্থাত আধুনিক রংপুর অঞ্চলে কালক্রমে মুসলমান সংখ্যাবৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত পরিণতি অর্জন করে। এরই সূদুরপ্রসারী ফলশ্রুতি ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের সৃষ্টি। নির্মীতির অন্তরালে ঘটে গেছে ঘটনা ও দুর্ঘটনার অগণিত মিথস্ক্রিয়া এবং অনিবার্য পরিণতি।
এই বিভাগের প্রতিটি জেলার মধ্যে রয়েছে একটি অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এখানকার মানুষের জীবন ধারন পদ্ধতি, জীবিকা, খাদ্য ও বাসস্থান, ভাষা, বিনোদন সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে অভিন্নতা। এই জনপদের মানুষ মুলত কৃষিজীবী। জমির উর্বরতা বেশি বিধায় প্রায় সারা দেশের ধান, পাঠ, গম, আলু ও অন্যান্য রবি শস্য এই অঞ্চল থেকে উৎপাদিত হয়। উত্তর জনপদের এই অঞ্চলে রয়েছে একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ন আঞ্চলিক ভাষাযা তাদেরকে অন্য আঞ্চলের থেকে স্বতন্ত্র করেছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস