মুক্তিযুদ্ধে রংপুর
রাজপথে মাঝপথে রক্তের লাল রং নয় কিছু বিস্ময়কর!
সংগামী জনতার মিছিলের হুংকারে শোষকেরা কাপে থরথর।
রংপুর বিভাগ—যার মধ্যে বর্তমানে ৮টি জেলা রয়েছে (রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড়)—মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল এক উত্তাল ও বীরত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশ। রংপুর বিভাগের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটি গৌরবময় অধ্যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে রংপুর অঞ্চল ছিল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধাঞ্চল। এখানে সংগঠিত প্রতিরোধ, গেরিলা আক্রমণ এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যমণ্ডিত করতে অসামান্য ভূমিকা পালন করে। নিচে রংপুর বিভাগের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হলো:
ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এই বিভাগটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিল একটি কৌশলগত হটস্পট। অনেক যোদ্ধা এই অঞ্চল দিয়ে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসে যুদ্ধ করেছেন।
২৫ মার্চের পর রংপুর শহরে পাকিস্তানি বাহিনী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়।
রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ছিল একটি বড় সামরিক ঘাঁটি। এখান থেকেই উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় সেনা অভিযান চালানো হতো।
কারমাইকেল কলেজ-এর অনেক ছাত্র ও শিক্ষক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।
দিনাজপুর ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ভয়াবহ গণহত্যার কেন্দ্র। শহরের বাহিরে ও গ্রামীণ এলাকায় হাজার হাজার মানুষ শহীদ হন।
ফুলবাড়ী ও বিরল অঞ্চলে সংঘটিত হয় বেশ কয়েকটি গেরিলা যুদ্ধ।
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে ডিসেম্বরের শুরুতে দিনাজপুর মুক্ত হয়।
এখানে ছিন্নমুল জনগোষ্ঠী, আদিবাসী ও সাধারণ কৃষকরা সক্রিয়ভাবে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে ভারতের সাহায্যে বড় আকারে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা আক্রমণ এখানে ছিল নিয়মিত। বিশেষ করে সৈয়দপুরে যুদ্ধ ছিল তীব্র।
সৈয়দপুরে বিহারিদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা অনেক বাঙালিকে হত্যা করে।
সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা এখানকার নদী ও চরের সাহায্যে গেরিলা যুদ্ধ চালায়।
ভারতের আসামের কাছাকাছি হওয়ায় এই অঞ্চল দিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে গিয়েছিলেন।
গাইবান্ধা শহরে ছাত্র-যুবকদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে।
এখানেও পাকিস্তানি বাহিনী গ্রামে গ্রামে অভিযান চালিয়ে মানুষ হত্যা করে।
ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় এই অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহের রুট হিসেবে পঞ্চগড় ব্যবহৃত হয়েছে।
রংপুর বিভাগের নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়, খাবার, চিকিৎসা, এমনকি গোপন বার্তা পৌঁছানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। অনেকেই ধর্ষণের শিকার হন, শহীদ হন—তাঁরা আমাদের গর্বের প্রতীক।
প্রতিটি জেলায় রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।
বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও শহীদ মিনার।
অনেক যুদ্ধস্থলকে স্মারক হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগ ছিল একটি জ্বলন্ত আগুনের মত। এই অঞ্চলের মানুষ দেশপ্রেম, সাহস ও আত্মত্যাগ দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা কখনো দাসত্ব মেনে নেবে না। এই ভূমি শহীদদের রক্তে রঞ্জিত—এটি বাঙালির গর্ব, মুক্তিযুদ্ধের গৌরব।
মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান করতে ভিসিট করুন
http://molwa.gov.bd/fighter_search.php
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস